
আমি তখন অনেক ছোট। সাত আট বছর বয়স হবে। আমার বাড়ির আশেপাশে সমবয়সীর সঙ্কটের কারণে নানিরবাড়িতেই বেশি সময় কাটাতাম। সারাদিন রান্নাবাটি খেলা, পিকনিক করা, দৌড়াদৌড়ি, পরীপরী খেলা, কুমির কুমির খেলা, চুইংগাম খেলা আরও কত কি! শীতের সময় ছাদে গোসল করার এক অন্যরকম মজা ছিল। এভাবেই দিন কাটতে থাকে।
একদিন শীতের দুপুরে ছাদে বসে আমাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিল আম্মু। তরকারি হলো জিয়েল মাছের ঝোল। জিয়েল মাছের মাথা শক্ত হওয়ায় আমরা তা খাই না। আম্মু মাথাসহ মাছের কাটাটি আমাদের পাটির একপাশে রেখে দিল। হঠাৎ দেখলাম একটি অপূর্ব বিড়াল এসে মাছের মাথাটি খেতে শুরু করেছে। বিড়ালটি ছিল সাদা ও সোনালী রঙের অসাধারণ মিশ্রণ স্বরূপ। বিড়ালটি মেয়ে হওয়ায় মনে মনে তার নাম রাখলাম সোনালী। যদিও এই নামে তাকে কখনো ডাকা হয়নি।
পরের দিন একই সময়ে খেতে বসেছি ছাদে। হঠাৎ দেখি সেই বিড়ালটি। আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। সে এসে নিঃসঙ্কোচে আমার কোল অধিকার করে নিল। আমি যতটা অবাক হলাম তার থেকেও অনেক বেশি আনন্দিত হলাম। বিড়াল সবসময়ই আমার অনেক প্রিয়। এরপর থেকে প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিড়ালটি আমার সাথেই থাকতো। আমরা একসাথে খেলতাম, মজা করতাম।
এর কিছুদিন পর আমি আমার বাসায় চলে এলাম। পড়াশুনার চাপ বাড়তে লাগল। অবসরে, বাসার পাশের বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেতে থাকতাম। সেই বিড়ালটির কথা আর মনেও আসলো না।
মাস দুই পর আবার নানিবাড়িতে এসেছি। নানিবাড়িতে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল ছাদ। সেখানে পা রাখতেই বিড়ালটার কথা মনে হলো। ওকে আশেপাশে খুজলাম। কিন্তু খুজে পেলাম না কোথাও। ওপরের ছাদে দেখলাম আমার বান্ধবী নিশু দাড়িয়ে আছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
আমার বিড়ালটাকে দেখেছিস?
ওপরে আয় বলছি।
আমি ওপরের ছাদে উঠে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো নিশুর মুখটা থমথমে। তারপর ও বলতে শুরু করল,
বিড়ালটি pregnant ছিল। সপ্তাহখানেক আগে বাসা থেকে সামনে বের হয়েছি। হঠাৎ দেখি বিড়ালটি রাস্তা পার হচ্ছে। বিড়ালটি pregnant হওয়ায় দ্রুত দৌড়াতে পারছিল না। হঠাৎ একটি ট্রাক এসে বিড়ালটিকে একেবারে পিশে ফেলল। বিড়ালটি রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রইল। মৃত বিড়ালটির রক্তাক্ত দেহ দেখে আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল।
কথাগুলো শোনার পর প্রথমে কিছুই বলতে পারলাম না। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব থাকলাম। অতঃপর নিজেকে সংযত করে বললাম,
আচ্ছা, তাইলে এখন যায়।
কিন্তু পরক্ষণেই মনটা অসংযত ও বিক্ষিপ্ত হয়ে চোখ দুটি ভিজে উঠল। ছাদের দিকে তাকতেই যেন মনে হলো বিড়ালটি আমার দিকে ছুটে আসছে।
কিন্তু আসলে তা না। আবারও এক অজানা শূন্যতায় মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।
Follow Zarin Tarafdar to stay updated on their latest posts!
0 comments
Be the first to comment!
This post is waiting for your feedback.
Share your thoughts and join the conversation.