সূরা ফালাকের আলোচনা
_________________________________
قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِ ۙ
মুফতী তাকী উসমানী
বল, ১ আমি ভোরের মালিকের আশ্রয় গ্রহণ করছি
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বল, ‘আমি শরণ নিচ্ছি ঊষার স্রষ্টার
—আল ফালাক্ব - ১
مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ ۙ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনি যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে,
—আল ফালাক্ব - ২
وَمِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ۙ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং অন্ধকার রাতের অনিষ্ট থেকে, যখন তা ছেয়ে ২ যায়
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘অনিষ্ট হতে রাত্রির অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়
—আল ফালাক্ব - ৩
وَمِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الۡعُقَدِ ۙ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং সেই সব ব্যক্তির অনিষ্ট হতে, যারা (তাগা বা সুতার) গিরায় ফুঁ দেয় ৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এবং অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়
—আল ফালাক্ব - ৪
আল ফালাক্ব, আয়াতঃ ৫
وَمِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ ٪
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসা করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।’
---------------------
তাফসীর (মুফতী তাকী উসমানী) (Bangla)
এই আয়াতের জন্য কোন তাফসীর নেই।
---------------------
তাফসীরে মাআ'রিফুল কুরআন (Bangla)
সম্পূর্ন সূরার তাফসীরঃ
তাফসীরের সার-সংক্ষেপঃ
(আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া ও অপরকে তা শিক্ষা দাওয়ার মূল উদ্দেশ্য তাঁর উপর তাওয়াক্কুল তথা পুরোপুরি ভরসা করা ও ভরসা করার শিক্ষা দেওয়া। অতএব ) আপনি (নিজে আশ্রয় চাওয়ার জন্য এবং অপরকে তা শিক্ষা দেওয়ার জন্য এরূপ ) বলুন, আমি প্রভাতের মালিকের আশ্রয় গ্রহণ করছি সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে, (বিশেষত) অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়, রাত্রিতে অনিষ্ট ও বিপদাপদের সম্ভাবনা বর্ণনাসাপেক্ষ নয়। গ্রন্থিতে ফুৎকার দিয়ে যাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। [ প্রথমে সমগ্র সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় গ্রহণের কথা উল্লেখ করার পর বিশেষ বিশেষ বস্তুর উল্লেখ সম্ভবত এজন্য করা হয়েছে যে, অধিকাংশ যাদু রাত্রিতেই সম্পন্ন করা হয়, যাতে কেউ জানতে না পারে এবং নির্বিঘ্নে কাজ সমাধা করা যায়। কবচে ফুঁৎকারদাত্রী মহিলার উল্লেখ এজন্য করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সা)-র উপর এভাবেই যাদু করা হয়েছিল, তা কোন পুরুষে করে থাকুক অথবা নারীরা نفثات-এর বিশেষ্য نفوس ও হতে পারে, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়েই শামিল আছে এবং নারীও এর বিশেষ্য হতে পারে। ইহুদীরা রসূলুল্লাহ্ (সা)-র উপর যে যাদু করেছিল, তার কারণ ছিল হিংসা। এভাবে যাদু সম্পর্কিত সবকিছু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা, হয়ে গেল। অবশিষ্ট অনিষ্ট ও বিপদাপদকে শামিল করার জন্য مِن شَرِّ مَا خَلَقَ এর -বলা হয়েছে আয়াতে আল্লাহ্কে প্রভাতের মালিক বলা হয়েছে অথচ আল্লাহ্ সকাল-বিকাল সবকিছুরই পলানকর্তা ও মালিক। এতে সম্ভবত ইঙ্গিত আছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা রাত্রির অন্ধকার বিদূরিত করে যেমন প্রভাতরশ্মি আনয়ন করেন, তেমনি তিনি যাদুরও বিলুপ্তি ঘটাতে পারেন।
আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষযঃ
সূরা ফালাক ও পরবর্তী সূরা নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। হাফেয ইবনে কাইয়্যেম (র) উভয় সূয়ার তফসীর একরে লিখেছেন। তাতে বলেছেন যে, এ সূরবিয়ের উপকারিতা ও কল্যাণ অপরিসীম এবং মানুষের জন্য এ দুটি সূরার প্রয়োজন অত্যধিক। বদনজর এবং সমস্ত দৈহিক ও আত্মিক অনিষ্ট দূর করায় এ সূরা দ্বয়ের কার্যকারিতা অনেক। সত্যি বলতে কি মানুষের জন্য স্বাস-প্রশ্বাস, পদাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদ যতটুকু প্রয়োজনীয়, এ সূরদ্বিয় তার চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। মসনদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহুদী রসূলুল্লাহ্ (সা)-র উপর যাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহুদী যাদু করেছে এবং যে জিনিসে যাদু করা হয়েছে, তা অমুক কূপের মধ্যে আছে। রসূলুল্লাহ্ (সা) লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গ্রন্থি ছিল। তিনি গ্রন্থিগুলো খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন। জিবরাঈল ইহুদীর নাম বলে দিয়েছিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সা) তাকে চিনতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যাপারে কারও কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার অভ্যাস তাঁর কোন দিনই ছিল না। তাই আজীবন এই ইহুদীকে কিছু বলেন নি এবং তার উপস্থিতিতে মুখমণ্ডলে কোনরূপ অভিযোগের চিহ্নও প্রকাশ করেন নি। কপটবিশ্বাসী হওয়ার কারণে ইহুদী রীতিমত দরবারে হাযির হত। সহীহ্ বুখারীতে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা)-র উপর জনৈক ইহুদী যাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেন নি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা (রা)-কে বললেনঃ আমার রোগটা কি আল্লাহ তা’আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দু’ব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্যজনকে বললঃ তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি যাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : কে যাদু করল? উত্তর হল, ইহুদীদের মির মুনাফিক লবীদ ইবনে আসাম যাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হল: কি বস্তুতে যাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বরষরওয়ান’ কূপের একটি পাথরের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সা) সে কূপে গেলেন এবং বললেন। স্বপ্নে আমাকে এই কৃগই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন। হযরত আয়েশা (রা) বললেনঃ আপনি ঘোষণা করলেন না কেন (যে, অমুক ব্যক্তি আমার উপর যাদু করেছে)? রসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন: আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে রোগ মুক্ত করেছেন। আমি কারও জন্য কষ্টের কারণ হতে চাই না। (উদ্দেশ্য, একথা ঘোষণা করলে মুসলমানরা তাকে হত্যা করত অথবা কষ্ট দিত)। মসনদে আহমদের রেওয়ায়েতে আছে রসূলুল্লাহ্ (সা)-র এই অসুখ ছয় মাস স্থায়ী হয়েছিল। কোন কোন রেওয়ায়েতে আরও আছে যে, কতক সাহাবায়ে কিরাম জানতে পেরেছিলেন যে, এ দুষ্কর্মের হোতা লবীদ ইবনে আ’সাম। তাঁরা একদিন রসূলূল্লাহ (সা)-র কাছে এসে আরয করলেন: আমরা এই পাপিষ্ঠকে হত্যা করব না কেন? তিনি তাঁদেরকে সেই উত্তর দিলেন, যা হযরত আয়েশা (রা)-কে দিয়েছিলেন। ইমাম সা’লাবী (র)-র রেওয়ায়েতে আছে জনৈক বালক রসূলুল্লাহ্ (সা)-র কাজকর্ম করত। ইহুদী তার মাধ্যমে রসূলুল্লাহ্ (সা)-র চিরুনী হস্তগত করতে সক্ষম হয়। অতঃপর একটি তাঁতের তারে এগারটি গ্রন্থি লাগিয়ে প্রত্যেক গ্রন্থিতে একটি করে সুই সংযুক্ত করে। চিরুনীসহ সেই তার খেজুর ফলের আবরণীতে রেখে অতঃপর একটি কূপের প্রস্তর খণ্ডের নিচে রেখে দেওয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা এগার আয়াতবিশিষ্ট এ দু’টি সূরা নাযিল করলেন। রসূলুল্লাহ্ (সা) প্রত্যেক গ্রন্থিতে এক আয়াত পাঠ করে তা খুলতে লাগলেন। গ্রন্থি খোলা সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে তিনি অনুভব করলেন যেন একটি বোঝা নিজের উপর থেকে সরে গেছে। -(ইবনে কাসীর)
যাদুগ্রস্ত হওয়া নবুয়তের পরিপন্থী নয়: যারা যাদুর স্বরূপ সম্পর্কে অবগত নয়, তারা বিস্মিত হয় যে, আল্লাহর রসূলের উপর যাদু কিরূপে ক্রিয়াশীল হতে পারে। যাদুর স্বরূপ ও তার বিশদ বিবরণ সূরা বাক্বারায় বর্ণিত হয়েছে। এখানে এতটুকু জানা জরুরী যে, যাদুর ক্রিয়াও অগ্নি, পানি ইত্যাদি স্বাভাবিক কারণাদির ক্লিয়ার ন্যায়। অগ্নি দাহন করে অথবা উত্তপ্ত করে, পানি ঠাণ্ডা করে এবং কোন কোন কারণের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বর আসে! এগুলো সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। পয়গম্বরগণ এগুলোর ঊর্ধ্বে নন। যাদুর প্রতিক্রিয়াও এমনি ধরনের একটি ব্যাপার। কাজেই তাঁদের যাদুগ্রস্ত হওয়া অবান্তর নয়।
সূরা ফালাক ও সূরা নাস এর ফজিলত: প্রত্যেক মু’মিনের বিশ্বাস এই যে, ইহকাল ও পরকালের সমস্ত লাভ-লোকসান আল্লাহ্ তা’আলার করায়ত্ত। তাঁর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কেউ কারও অণু পরিমাণ লাভ অথবা লোকসান করতে পারে না। অতএব, ইহকাল ও পরকালের সমস্ত বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিয়ে দেওয়া এবং কাজেকর্মে নিজেকে তাঁর আশ্রয়ে যাওয়ার যোগ্য করতে সচেষ্ট হওয়া। সূরা ফালাকে ইহলৌকিক বিপদাপদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা আছে এবং সূরা নাসে পারলৌকিক বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহে উভয় সূরার অনেক ফযীলত ও বরকত বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের (রা)-এর বর্ণিত হাদীসে রসূলূল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা লক্ষ্য করেছ কি. অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ্ তা’আলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না অর্থাৎ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ওقل أعُوذُ بِرَبِّ النّاسِ আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে তওরাত, ইঞ্জীল, যবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ কোন সূরা নেই। এক সফরে রসূলুল্ল (সা) ওকবা ইবনে আমের (রা)-কে সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করালেন, অতঃপর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তিলাওয়াত করে বললেনঃ এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা থেকে গাত্রোত্থানের সময়ও পাঠ কর। অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন।-(আবূ দাউদ, নাসায়ী)
হযরত আয়েশা (রা) বলেন: রসূলুল্লাহ্ (সা) কোন রোগে আক্রান্ত হলে এই সূরাদ্বয় পাঠ করে হাতে ফুঁ দিয়ে সর্বাঙ্গে বুলিয়ে দিতেন। ইন্তেকালের পূর্বে যখন তাঁর রোগযন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়, তখন আমি এই সূরাদ্বয় পাঠ করে তাঁর হাতে ফুক দিতাম। অতঃপর তিনি নিজে তা সর্বাঙ্গে বুলিয়ে নিতেন। আমার হাত তাঁর পবিত্র হাতের বিকল্প হতে পারত না। তাই আমি এরূপ করতাম।—(ইবনে কাসীর) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (রা) বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাঁকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেন : বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা ইখলাছ ও কুল আউস্ সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিনবার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে।—(মাযহারী)
সারকথা এই যে, যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য রসূলুল্লাহ্ (সা) ও সাহাবায়ে কিরাম এই সূরাদ্বয়ের আমল করতেন। অতঃপর তায়াতসমূহের তফসীর দেখুনঃفلق --- قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ-এর শাব্দিক অর্থ বিদীর্ণ হওয়া। এখানে উদ্দেশ্য নিশি শেষে ভোর হওয়া। অন্য এক আয়াতে আল্লাহর গুণ فَالِقُ الإِصْبَاحِ বর্ননা করা হয়েছে। এখানে আল্লাহর সমস্ত গুণের মধ্য থেকে একে অবলম্বন করার রহস্য এই হতে পারে যে, রাত্রির অন্ধকার প্রায়ই অনিষ্ট ও বিপদাপদের কারণ হয়ে থাকে এবং ভোরের আলো সেই বিপদাপদের আশংকা দূর করে দেয়। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, যে তাঁর কাছে আশ্রয় চাইবে, তিনি তার সকল মুসীবত দূর করে দেবেন।-(মাযহারী)
مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ আল্লামা ইবনে কাইয়োম (র) লিখেনঃ شَرِّ শব্দটি দু’প্রকার বিষয়বস্তুকে শামিল করে—এক. প্রত্যক্ষ অনিষ্ট ও বিপদ, যদ্বারা মানুষ সরাসরি কষ্ট পায়, দুই. যা মুসীবত ও বিপদাপদের কারণ হয়ে থাকে। যেমন কুফর ও শিরক। কোরআন ও হাদীসে যেসব বস্তু থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা আছে, সেগুলো এই প্রকারদ্বয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেগুলো হয় নিজেই বিপদ, না হয় কোন বিপদের কারণ।
আয়াতের ভাষায় সমগ্র সৃষ্টির অনিষ্টই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই আশ্রয় গ্রহণের জন্য এ বাক্যটিই যথেষ্ট ছিল কিন্তু এস্থলে আরও তিনটি বিষয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রায়ই বিপদ ও মুসীবতের কারণ হয়ে থাকে।
প্রথমে বলা হয়েছে غسق -- وَ مِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَب. শব্দের অর্থ অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া। হযরত ইবনে আব্বাস (রা), হাসান ও মুজাহিদ (র) غاسق-এর অর্থ নিয়েছেন রাত্রি। ر قرب অর্থ অন্ধকার পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পাওয়া। আয়াতের অর্থ এই যে, আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই রাত্রি থেকে যখন তার অন্ধকার গভীর হয়। রাত্রিবেলায় জিন, শয়তান, ইতরপ্রাণী কাট পতঙ্গ ও চোর-ডাকাত বিচরণ করে এবং শত্রুরা আক্রমণ করে। যাদুর ক্রিয়াও রাত্রিতে বেশী হয়। তাই বিশেষভাবে রাত্রি থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয় এই نفث -- ومِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ-এর তো ফু দেওয়া।عقد শব্দটি عقيدة এর বহুবচন। অর্থ গ্রন্থি। যারা যাদু করে, তারা ভোর ইত্যাদিতে গিরা লাগিয়ে তাতে যাদুর মন্ত্র পড়ে ফু দেয়। এখানে نفاثات স্ত্রীলিঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে। এটা نفوس -এরও বিশেষণ হতে পারে, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়ই দাখিল আছে। বাহ্যত এটা নারীর বিশেষণ। যাদুর কাজ সাধারণত নারীরাই করে এবং জন্মগতভাবে এর সাথে তাদের সম্পর্কও বেশী। এছাড়া রসূলুল্লাহ (সা)-র উপর যাদুর ঘটনার প্রেক্ষাপটে সূরাদ্বয় অবতীর্ণ হয়েছে। সেই ঘটনায় ওলীদের কন্যারাই পিতার আদেশে রসূলুল্লাহ্ (সা)-র উপর যাদু করেছিল। যাদু থেকে আশ্রয় চাওয়ার কারণ এটাও হতে পারে যে, এর অনিষ্ট সর্বাধিক। কারণ, মানুষ যাদুর কথা জানতে পারে না। অজ্ঞতার কারণে তা দূর করতে সচেষ্ট হয় না। রোগ মনে করে চিকিৎসা করতে থাকে। ফলে কষ্ট বেড়ে যায়।
তৃতীয় বিষয় হচ্ছে,وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدْ অর্থাৎ হিংসুক ও হিংসা। হিংসার কারণেই রসূসুল্লাহ (সা)-র উপর যাদু করা হয়েছিল। ইহুদী ও মুনাফিকরা মুসলমানদের উন্নতি দেখে হিংসার অনলে দগ্ধ হত। তারা সম্মুখ যুদ্ধে জয়লাড করতে না পেরে যাদুর মাধ্যমে হিংসার দাবানল নির্বাপিত করার প্রয়াস পায়। রসূলুল্লাহ্ (সা)-র প্রতি হিংসা পোষণকারীর সংখ্যা জগতে অনেক। এ কারণেও বিশেষভাবে হিংসা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।
حسد
শব্দের অর্থ কারও নিয়ামত ও সুখ দেখে দগ্ধ হওয়া ও তাঁর অবসান কামনা করা। এই হিংসা হারাম ও মহাপাপ। এটাই আকাশে করা সর্বপ্রথম গোনাহ্ এবং এটাই পৃথিবীতে করা সর্বপ্রথম গোনাহ্। আকাশে ইবলীস আদম (আ)-এর প্রতি এবং পৃথিবীতে আদমপুত্র কাবীল তদীয় ভ্রাতা হাবীলের প্রতি হিংসা করেছে।-(কুরতুবী)حسد তথা হিংসার কাছাকাছি হচ্ছে غبط তথা ঈর্ষা। এর সারমর্ম হচ্ছে কারও নিয়ামত ও সুখ দেখে নিজের জন্যও তদ্রুপ নিয়ামত ও সুখ কামনা করা। এটা জায়েয বরং উত্তম ।
এখানে তিনটি বিষয় থেকে বিশেষ আশ্রয় প্রার্থনার কথা আছে। কিন্তু প্রথম ও তৃতীয় বিষয়ের সাথে বাড়তি কথা যুক্ত করা হয়েছে غاسق-এর সাথে , اذا وقبএবং حاسد এর সাথে اذا حسد সংযুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয় نفاثات- এর সাথে কোন কিছু সংযুক্ত করা হয়নি। কারণ এই যে, যাদুর ক্ষতি ব্যাপক। কিন্তু রাত্রির ক্ষতি ব্যাপক নয় বরং রাত্রি যখন গভীর হয়, তখনই ক্ষতির আশংকা দেখা দেয়। এমনি ভাবে হিংসুক ব্যক্তি যে পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে প্রবৃত্ত না হয়, সেই পর্যন্ত হিংসার ক্ষতি তার নিজের মধ্যেই সীমিত থাকে। তবে সে যদি হিংসায় উত্তেজিত হয়ে প্রতিপক্ষের ক্ষতিসাধনে সচেষ্ট হয়, তবেই প্রতিপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই প্রথম ও তৃতীয় বিষয়ের সাথে বাড়তি কথাগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে।
Shahid Ibna Sahjahanさんをフォローして最新の投稿をチェックしよう!
0 件のコメント
この投稿にコメントしよう!
この投稿にはまだコメントがありません。
ぜひあなたの声を聞かせてください。